পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১২

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন একুশ শতক শেষে উষ্ণতা বাড়বে ৪ ডিগ্রি



ঢাকা, নভেম্বর ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারলে একুশ শতকের শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

১৮ নভেম্বর প্রকাশিত ‘টার্ন ডাউন দ্য হিট’ শীর্ষক এই বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়া, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়া, চরম তাপদাহ দেখা দেয়াসহ একের পর এক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

এতে বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলের মানুষই কম বেশি ভুগবে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী। মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশসহ আরো কয়েকটি দেশ।

পোটসড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইম্প্যাক্ট রিসার্চ (পিআইকে) এবং ক্লাইমেট অ্যানালিটিকস নামের দুটি প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ব্যাংকের হয়ে এ গবেষণা চালায়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব এ শতাব্দী শেষে আরও ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপ্তপ্ত হওয়ার পথে রয়েছে। গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই তাপমাত্রার বৃদ্ধি রোধ করা তেমন একটা সম্ভব হবে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উষ্ণতাবৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার দেশগুলোর তালিকায় আছে বাংলাদেশও। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এমনিতেই বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেশি। এদেশের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি অঞ্চলের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ মিটারেরও মধ্যে থাকায় বন্যা ও লোনা পানিতে উপকূলীয় জনপদ তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা আরও বাড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও উষ্ণতা বাড়ায় সাইক্লোনগুলো আরও শক্তিশালী হবে। বিশ্ব ব্যাংকের আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৮০ লাখের বেশি মানুষ তিন মিটারের বেশি জলোচ্ছাসের কবলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে যাদের সংখ্যা ২০৫০ সালের বেড়ে ১ কোটি ৪৬ লাখে দাড়াতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১০০ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দশমিক ৫ মিটার থেকে ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার, মেক্সিকো, ভারত, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া।

তাপমাত্র বাড়ায় বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়গুলোর তীব্রতা আরো বাড়বে বলে গবেষকরা জানান।

কয়েকশ’ বছরে একবার করে দেখা দেওয়া চরম তাপদাহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শতাব্দী শেষে অনেক অঞ্চলে প্রায় পুরো গ্রীষ্ম মৌসুম ধরেই দেখা দিতে পারে। বিশ্বের শুষ্ক অঞ্চলগুলোর আরও শুষ্ক হবে। অন্যদিকে বৃষ্টিপাতের অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টি আরও বাড়বে।

এসব পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ায় পুষ্টিহীনতার হার বাড়বে।

প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়াং কিম বলেন, “বিশ্বের তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস অবশ্যই বাড়তে দেয়া যাবে না। আমাদেরকে এই বৃদ্ধিটা দুই ডিগ্রির মধ্যে ধরে রাখতে হবে।”

তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বৃদ্ধি রোধ করা এখনও সম্ভব। এখন থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা যাবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এফএ/এসইউ/১১৪০ ঘ.

এইচআইভি প্রতিরোধে গরুর দুধ



 
ঢাকা, অক্টোবর ১৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- গরুর দুধ থেকে সংগৃহীত এইচআইভি প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি দিয়ে এক ধরনের মাখন বা জেল তৈরি করা সম্ভব যা মানবদেহে এই ভাইরাস সংক্রমণ রোধ করবে।

এক গবেষণায় এমন কথাই বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মারিত ক্রামস্কি।

তার মতে, গর্ভবতী গরুকে এইচআইভির টিকা দিলে এক ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। বাছুর জন্মের পর রোগ প্রতিরোধী কলোস্ট্রাম নামের প্রথম যে দুধ পাওয়া যায় তা থেকে সংগ্রহ করা যায় এই অ্যান্টিবডি।

পরীক্ষাগারে ক্রামস্কি ও তার সহকর্মীরা ওই অ্যান্টিবডির সঙ্গে এইচআইভি ভাইরাসের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন এবং মানব কোষে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছেন।

ক্রামস্কি বলেন, এ প্রক্রিয়ায় একটি গরুর দুধ থেকে এক কিলোগ্রাম পর্যন্ত অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করা এবং তা দিয়ে এইচআইভি প্রতিরোধের চিকিৎসা করা সম্ভব।

আর এর পরবর্তী পর্যায়ে ওই অ্যান্টিবডি দিয়ে এক ধরনের ক্রিম বা জেল তৈরি করা যেতে পারে; যা ব্যবহার করে নারীরা শারিরীক সম্পর্কের মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।

তবে এক্ষেত্রে পুরুষদের জন্যও একইধরনের পণ্য তৈরি করে এইচআইভি প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা সম্ভব। কিন্তু তা বানাতে হবে ভিন্ন ফরমূলায়, বলেন ক্রামস্কি।

এখন ওই দুধ কতটুকু নিরাপদ এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে আরো গবেষণা করছেন গবেষকরা, পিটিআই এ খবর জানিয়েছে। চূড়ান্ত ফলাফল পেতে আরো এক দশক অপেক্ষা করতে হতে পারে।

তবে এখন পর্যন্ত গবেষকরা ওই দুধের মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাসকে এতটা দুর্বল করতে সক্ষম হয়েছেন যাতে তা মানবদেহের কোষকে আক্রান্ত করতে না পারে।

ক্রামস্কি বলেছেন, “এটি খুব সাশ্রয়ী এবং এভাবে সহজেই প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি করা সম্ভব।”

অস্ট্রেলিয়ার প্রাণপ্রযুক্তি কোম্পানি ইমিউরন লিমিটেডের সঙ্গে এ কাজ পরিচালনা করছেন তিনি। এখন তিনি ওই দুধের মান আরো বাড়ানো এবং একে এইচআইভি প্রতিরোধী ক্রিমে পরিণত করার জন্য কাজ করে যাবেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/বিসিএস/এলকিউ/২১১৬ঘ.

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ঘড়ি নিষিদ্ধ



 
নুরুল ইসলাম হাসিব
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

ঢাকা, নভেম্বর ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে ঘড়ি নিতে পারবেন না।

সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ঘড়ি সদৃশ মোবাইল ফোনে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর কাছে এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর যাওয়ার ঘটনা ধরা পড়ার পর এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।

শুক্রবার মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) শাহ আব্দুল লতিফ বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রথমবারের মতো তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই সিদ্ধান্তের কারণে পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনো সমস্যার মুখোমুখি না হন সেজন্য পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষে ‘পর্যাপ্ত সংখ্যক ঘড়ি’ বসানোর জন্য কেন্দ্র প্রধানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে এবার আট হাজার ৪৯৩টি আসনের বিপরীতে ৫৮ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

২২টি সরকারি মেডকেল কলেজে দুই হাজার ৮১১ এবং ৫৩টি বেসরকারি মেডিকেলে চার হাজার ২৪৫টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া নয়টি সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটে ৫৬৭টি আসন রয়েছে। আর ১৪টি বেসরকারি ডেন্টাল ইনস্টিটিউটে রয়েছে ৮৭০টি আসন।

পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নেয়ার ওপর অনেক আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আর এবার ঘড়ির বিষয়েও একই সিদ্ধান্ত নেয়া হল।

শাহ আব্দুল লতিফ বলেন, সম্প্রতি ঘড়ি ব্যবহার করে পরীক্ষায় জালিয়াতির যে খবর বেরিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার তাদের বৈঠকে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের ঘড়ি নেয়াও নিষিদ্ধ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ঘড়ি ব্যবহার করে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে অক্টোবরে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

এই জালিয়াত চক্রের সদস্যরা শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের ঘড়ি সদৃশ মোবাইল ফোন সরবরাহ করতেন এবং পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে ওই মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে দিতো।

পরিচালক বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দেশের ২৩টি পরীক্ষা কেন্দ্রে এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা তদারকির জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে।

ওই সব কমিটিতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়েছেন।

‘প্রশ্নফাঁসের কোনো গুজব ওঠাসহ’ যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলেও জানান পরিচালক।

গত ১০ সেপ্টেম্বর আদালতের এক আদেশে পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থীর ভর্তির নির্দেশনার পর ২৩ নভেম্বর পরীক্ষার দিন রাখে সরকার।

এর আগে গত ১২ অগাস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেছিলেন, এবার থেকে কোনো ভর্তি পরীক্ষা নয়, এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ’র ভিত্তিতে মেডিকেল ও ডেন্টালে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

মন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরপর তার বিরুদ্ধে সারা দেশে আন্দোলন শুরু করে মেডিকেল ভর্তিচ্ছুরা। আন্দোলনের মুখে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এনআইএইচ/এএইচ/এএল/১৭২২ ঘ.

অভিষেকেই ইতিহাস গড়লেন হাসান



 
ঢাকা, নভেম্বর ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) - বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক টেস্টে শতক করেছেন আবুল হাসান রাজু। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে ১০০ রানে ব্যাট করছেন তিনি।

টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৫ বছরের ইতিহাসে দশ নম্বরে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে শতক করেছেন হাসান। ১৮৮৪ সালে ইংল্যান্ডের ওয়াল্টার রিড (১১৭) প্রথম দশ নম্বরে শতক করেন। ১৯০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার রেগি ডাফ (১০৪) দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দশ নম্বরে শতক করেন। হাসানের মতো তার শতকটিও এসেছিল অভিষেকেই। সর্বশেষ ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে ১০৮ রান করেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্যাট সিমকক্স।

বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দেয়া হাসানের ১০৮ বলের ইনিংসটি ১৩টি চার ও ৩টি ছক্কা সমৃদ্ধ।

শাহাদাত হোসেনের বদলে খুলনায় জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নামেন এর আগে দেশের হয়ে চারটি টি-টোয়েন্টি খেলা এই পেসার। দেশের ৬৫তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট খেলতে নেমে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। ৬টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা এই পেসারের অর্ধশতক একটিই (৬১)।

চা-বিরতির পরপরই ১৯৩ রানে অষ্টম উইকেটের পতনের পর মাঠে নামেন ২০ বছর বয়সী হাসান। শুরেেু কই িিঅত বোলারদের ওপর চড়াও হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

প্রথম অর্ধশতকে পৌঁছাতে খেলেন ৫৫ বল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির বলে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান তিনি। পরের অর্ধশতকটি আসে ৫১ বলে। সুনীল নারায়ণের করা দিনের শেষ ওভারের চতুর্থ বলটি ফ্লিক করে দুই রান নিয়ে ১১০ বছরের মধ্যে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে শতকে পৌঁছান তিনি।

বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে এর আগে আমিনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আশরাফুল শতক করেন। আমিনুল ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ও আশরাফুল ২০০১ সালে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতক করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএনএম/এসইউ/১৭৫৫ ঘ.

সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১২

মানুষের স্বপ্ন যেখানে সত্য হয়

গীতি আরা নাসরীন 

গীতি আরা নাসরীন
অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ছেলেবেলা আর পৃথিবীর পাঠশালায়
একসময় পড়ার ধরন ছিল, হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তা-ই। কৈশোরে পড়েছি মাসুদ রানা আর উত্তর-চল্লিশে হ্যারি পটার। দিনের পর দিন বিমর্ষ হয়ে থেকেছি আলেক্সান্দার সোলজিনিৎসিনের ক্যানসার ওয়ার্ড পড়ে। গোগ্রাসে পড়া অবশ্য এখনকার জীবনাচরণে অনেক কমে গেছে। বেশির ভাগই ননফিকশন, তথ্যমূলক (অর্থাৎ অধিকাংশই নীরস) পাঠ্যবই। বারবার পড়ার দিনগুলোতে পড়েছি ম্যাক্সিম গোর্কির আমার ছেলেবেলা আর পৃথিবীর পাঠশালায়, রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ, এরিখ মারিয়া রেমার্কের তিন বন্ধু, জীবনানন্দ দাশ আর শামসুর রাহমানের কবিতা। হাতের কাছে এখন অরহান পামুকের ইস্তাম্বুল।

কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে যেন আমায়
বেশ কিছুদিন গান শুনছি না। কিছু দিন আগেও গান শুনতাম ইউটিউবে। এখন ইউটিউব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাগ করে গান শোনাও বন্ধ। গানের ব্যাপারে কানে যা ভালো লাগে তা-ই শুনতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। যেমন বেগম আখতার, তেমনি কিশোরী আমনকর, কখনো রবীন্দ্রনাথ, কখনো হেমাঙ্গ—এখন জোয়ান বায়েজ তো তখন কেটি মেলুয়া। তবে, শোনার সময়-কাল এবং মানসিক অবস্থা প্রভাব ফেলে বাছাইয়ের ব্যাপারে। অসংখ্যবার একই গান বা নানা শিল্পীর কণ্ঠে একই গান শোনা তো হয়ই। কিন্তু সেই কোন কাল থেকে মাথার ভেতর কেন যেন এই গানটি বাজে—‘কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে যেন আমায়, কে ডাকে আয় চলে আয়...।’

সঙ্গী শুধু প্রিয়জন
আমি ক্ষুরপেয়েদের দলে। মন সারাক্ষণই ‘দূরে কোথাও দূরে দূরে’ করতে থাকে। জীবন ছোট, যাওয়ার জায়গা অনেক। সুতরাং বারবার এক জায়গায় খুব একটা যেতে ইচ্ছে করে না। নতুন নতুন জায়গায় যেতে ইচ্ছে করে। খুব যেতে চাই, কিন্তু এখনো যাওয়া হয়নি—এমন জায়গাগুলোর মধ্যে আছে, মাচুপিচুতে ইনকা সভ্যতার নিদর্শন, মস্কোতে সমাজতান্ত্রিক সভ্যতার নিদর্শন, আর দারুণ প্রাণময় কিউবা। পরবর্তী সম্ভাব্য গন্তব্য, ভিয়েতনাম আর লাওস। দলগত ভ্রমণের হুল্লোড়ে আনন্দ আছে একটা। কিন্তু বুঁদ হয়ে থাকার জন্য দরকার একাকী ভ্রমণ, কিংবা সঙ্গী শুধু প্রিয়জন (সমমনা)।

পদাতিকের বিষাদসিন্ধু
মঞ্চনাটক শেষ দেখেছি মনে হয় ঢাকা পদাতিকের আপদ। মঞ্চনাটক থেকেই পরিচিত হই সেলিম আল দীন, বের্টল্ট ব্রেখট আর মঁলিয়েরের লেখা নাটকের সঙ্গে। আর মুনীর চৌধুরীর নাটক বা অনুবাদের ভক্ত হই পড়ে। তবে সম্ভবত সত্তরের শেষ দিকে বিটিভিতে সাঈদ আহমেদ একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপন করতেন, যা বিশ্ব নাটকের একটা জানালা খুলে দিয়েছিল আমার জন্য। মঞ্চে মুগ্ধ করেছেন সারা যাকের (সৎ মানুষের খোঁজে) আর শাঁওলী মিত্র (নাথবতী অনাথবৎ)। প্রডাকশন হিসেবে মুগ্ধ করেছিল পদাতিকের বিষাদসিন্ধু।

ভ্যান গঘ ক্লদ মনে ফ্রিদা কাহেলা
সত্যি বলতে কি, চিত্র প্রদর্শনীতে যতটা না যাওয়া হয়, তার চেয়ে বেশি যাওয়া হয় আর্ট মিউজিয়ামে। প্রিয় চিত্রশিল্পীদের মধ্যে আছেন ভ্যান গঘ—তাঁর সাহসী আর জীবনময় স্ট্রোকগুলোর জন্য; মনে রং ছড়ানোর জন্য ক্লদ মনে, আর বেদনায় বলিষ্ঠ আত্মপ্রকাশের জন্য ফ্রিদা কাহেলা।

স্বপ্ন যেখানে সত্য হয়
এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে স্বপ্নগুলো আর শুধু লালন করতে না হয়। শুধু আমার নয়, মানুষের স্বপ্ন যেখানে সত্য হয়।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: কাজল রশীদ

শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১২

একজন সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ

যুক্তরাষ্ট্রে ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ পাওয়া তরুণদের মধ্যে একজন সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ।
প্রতিবছর ব্যুরো অব এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার (ই.সি.এ.) অফ দা ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অফ ষ্টেট হতে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত গবেষণা ধর্মী গ্রুপ এইচ.টি.আই [হিউম্যান টেকনোলজি ইন্টার‍্যাকশন] এর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি বহুল কাঙ্ক্ষিত ইন্টারন্যাশনাল ফুলব্রাইট স্কলারশিপ “সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাওয়ার্ড ২০১০-২০১১" পেয়েছিলেন।






বাংলাদেশে ওপেন স্ট্রীট ম্যাপের উদ্যোক্তা ও রিসার্চ গ্রুপ “হিউম্যান টেকনোলজি ইন্টার‍্যাকশন” এর উদ্যোক্তা সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষক ছিলেন ।
বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কে অবস্থিত কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে ইনফরমেশন সাইন্সে মাস্টার্স করে ইন্টার‍্যাক্টিভ ডিজাইন ল্যাবে পি.এইচ.ডি করছেন। তিনি নভেম্বর ২০১১ এএমআইএ ফল সিম্পোজিয়ামে ইন্টারেক্টিভ সিস্টেম ইন হেলথকেয়ার ওয়ার্কশপে তার “বার্থ রেকর্ড কমিউনিকেটরঃ এ পাথওয়ে টু অটোমেটেড হেলথ ডাটা একিউজিশন সিস্টেম” পেপারটি উপস্থাপনা করেন।
এছাড়াও ২০১২ তে মে মাসে আমেরিকার টেক্সাসের বোস্টনে অনুষ্ঠিতব্য “এডুকেশনাল ইন্টারফেস সফটওয়ার অ্যান্ড টেকনোলজি”তে একমাত্র বাংলাদেশী যিনি অর্গানাইজার হিসেবে রয়েছেন । এটি “কম্পিউটার হিউমেন ইন্টারেকশন” (সিএইচআই) ২০১২ এর সাথে সংযুক্ত হয়ে ই,এ,এস,টি তাদের ৩য় কর্মশালা আয়োজন করেছিল। https://sites.google.com/site/eist2012/home/organizers
“এডুকেশনাল ইন্টারফেস সফটওয়ার টেকনোলজি” এ সেমিনারের মাধ্যমে মোবাইল ইন্টার‍্যাকশন, ক্লাউড কম্পিউটিং, ন্যাচারাল ইউজার ইন্টারফেস আর গেসচারেল ইন্টারফেস যেমন নিনটেনডো উই, মাইক্রোসফট কাইনেক্ট এর মত প্রাকটিক্যাল নতুন টেকনোলজি গুলি ছাত্রদের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছিল যেন পরবর্তীতে তারা নিজেরাই বাসায় নিজে নিজে শিখতে পারে ও কাজ করতে পারে ।
এ সেমিনারের অর্গানাইজারদের মধ্যে সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ সবচেয়ে নবীন। এছাড়াও অর্গানাইজার হিসেবে আছেন স্মার্ট টেকনোলজির এডওয়ার্ড টিএসই, ইউনিয়ন কাউন্টি পাবলিক স্কুলের লিয়েন ভি মারেনটি, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালেক্স থায়ের, টেকনিসচ ইউনিভারসিটেট ডারমস্তেদ এর জচেন হুবার ও মক্স মুহলহাসার, ইউনিভারসিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার সি জাং জান কিম, বোওয়ি স্টেট ইউনিভারসিটির কিউন্সি ব্রাউন।
ইম্যাজিন কাপে তার হ্যাপ প্রজেক্টটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

গত বছর জুলাইতে “স্পন্দন বি ইন্টারপ্রিয়িয়নশিপ কনটেস্ট “ এ চ্যাম্পিয়ন টিম এপিকেলিপটিক টিমের মোবিএড প্রজেক্টটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। বাকিরা ছিলেন বুয়েটের সাজেদুর রহমান,আসিফ সেতু, সৈকত।
ওপেন স্ট্রীট ম্যাপকে বাংলাদেশে প্লট করার উদ্যোক্তা তিনিই। স্পেনে আয়োজিত দা ষ্টেট অফ দা ম্যাপ(এস.ও.টি.এম.) কনফারেন্স ২০১০ এ ওপেনস্ট্রিটম্যাপ ট্রাভেল স্কলারশিপ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনিই অংশগ্রহণ করেন।
http://wiki.openstreetmap.org/wiki/User:Ishtiaque
http://www.mail-archive.com/talk-bd@openstreetmap.org/msg00010.html
সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অটিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন। মোহাম্মদপুরে অবস্থিত অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সাথে তিনি ও তার গ্রুপ হিউম্যান টেকনোলজি ইন্টারেকশন বেশ কিছু কাজ করেছে।হিউম্যান টেকনোলজি ইন্টারেকশন এর প্রথম কাজটা শুরু হয় এম.আই.টি. মিডিয়া ল্যাবের একজন পি.এইচ.ডি স্টুডেন্ট এর সাথে। তার কাজের এক্সটেনশন ছিল যে অটিস্টিক বাচ্চাদের স্পিচ ডেভেলপমেন্ট এর জন্য কম্পিউটার গেম তৈরি করা যায়। মালয়েশিয়ায় মার্চ ২০১১ এ অনুষ্ঠিত IEEE সিম্পোজিয়ামে তার “এ-ক্লাস ইন্টিলিজেন্ট ক্লাসরুম সফটওয়ার ফর দা অটিস্টিক চিলড্রেন "প্রজেক্টটি" পেপারটি বেশ আলোচিত ছিল। আরেকটি উল্লেখযোগ্য পেপার "এ কম্পিউটার গেম বেজড অ্যাপ্রচ ফর ইনক্রিজিং ফ্লুয়েন্সি ইন দা স্পীচ অফ দা অটিস্টিক চিলড্রেন"।
এছাড়া তিনি এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে “মোবাইল ফোন বেজড অ্যাপ্রচ ফর মাইক্রোক্রেডিট ইন রুরাল বাংলাদেশ“ প্রজেক্টটিতে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিকে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছেন।
“স্মার্ট ব্ল্যাড ব্যাংক কুয়েরি :“এ নভেল মোবাইল ফোন বেজড প্রাইভেসি- অ্যাওয়ার ব্লাড ডোনার রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ফর ডেভলপিং রিজিয়নস“ ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ওয়েবসাইটHTI এর ওয়েবসাইট।
http://idl.cornell.edu/welcome/people/
http://cornell.academia.edu/SyedIshtiaqueAhmed

শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১২

নিজেকে কখনো অবমূল্যায়ন কোরো না







যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, ৪ আগস্ট ১৯৬১। সম্প্রতি ৬ নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১২ সালের ১৪ মে বার্নার্ড কলেজের সমাবর্তনে তিনি এই বক্তৃতা দেন।

উপস্থিত সবাইকে আমার অসংখ্য ধন্যবাদ! অভিনন্দন ২০১২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা! তোমাদের চারপাশের সবাই আজ তোমাদের নিয়ে গর্বিত। তোমাদের বাবা-মা, পরিবার, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব, সবাইকে অভিনন্দন!
আমি গ্র্যাজুয়েশন করি ১৯৮৩ সালে। তখন আমাদের আইপড ছিল না, ছিল শুধু ওয়াকম্যান। টাইমস স্কয়ারও আজকের মতো ছিল না। সেসব এখন ইতিহাস। আমি জানি, সমাবর্তন বক্তা ইতিহাসের বুলি কপচানো শুরু করলে তার মতো বিরক্তিকর ব্যাপার আর হয় না!

তোমাদের জন্য আমার প্রথম উপদেশ, কোনো কাজই দায়সারাভাবে করবে না। কাজ যখন করবেই, দারুণ কিছু একটা করবে। নিজের স্বপ্নের জন্য সংগ্রাম করবে। যদি বড় কিছু হতে চাও, তার জন্য কাজও সেভাবেই করতে হবে। তোমাদের সামনে যে অবারিত সুযোগ আছে, সেগুলোকে ঠিক সময়ে কাজে লাগাতে হবে। শুধু নিজেদের উন্নতির জন্য নয়, যারা তোমাদের সমান সুযোগ এখনো পায়নি, তাদের উন্নয়নের জন্য তোমাদের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
তোমার ভবিষ্যৎ কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে অন্যের কথায় কান দিয়ো না। জীবন তোমার নিজের হাতে। কোনটা উচিত, কোনটা অনুচিত—নিজেই বুঝে নিতে শেখো। সব সময় নিজের অধিকার নিজেকেই আদায় করে নিতে হবে। তোমার সমস্যা তোমাকেই সবার সামনে তুলে ধরতে হবে, রাস্তায় তোমাকেই নামতে হবে। শুধু বসে বসে কী হচ্ছে দেখলে চলবে না।

যা ঠিক, তাকে জোর গলায় বলতে দ্বিধা কোরো না। অন্য কেউ বলবে, সেই আশায় বসেও থেকো না। হয়তো অন্যরাও একই কথা ভাবছে, হয়তো সবাই তোমার অপেক্ষায় বসে আছে, কে জানে! আর তাই তোমাদের জন্য আমার দ্বিতীয় উপদেশ, নিজেকে কখনো অবমূল্যায়ন কোরো না। তুমি নিজেই সম্ভাবনার এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠতে পারো, তখন তোমার সাফল্য আর দশজনকে স্বপ্ন দেখাতে উৎসাহিত করবে। নিজের এই বিপুল সম্ভাবনাকে কখনো ছোট করে দেখো না। তোমাদের আমি এক নারীর গল্প বলতে পারি। তার পরিবার এ দেশে অভিবাসী হয়ে এসেছিল। স্কুলে থাকতে তাকে বলা হতো, তার মাথায় যে বুদ্ধি, তাতে কলেজে ভর্তি না হওয়াই শ্রেয়। তার শিক্ষক উপদেশ দিয়েছিলেন, স্কুলের পড়ার পাট চুকিয়ে কোনো একটা কাজে লেগে যেতে। কিন্তু মেয়েটি ছিল ভীষণ জেদি, সে শিক্ষকের কথা কানে তোলেনি। সে কলেজে ভর্তি হলো। একসময় মাস্টার্স ডিগ্রিও লাভ করল। স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচল করল, জিতে গেল। প্রাদেশিক পদের জন্য লড়াই করল, সেখানেও জিতল। কংগ্রেস নির্বাচনে অংশ নিল, সেখানেও না জিতে ছাড়ল না। শেষ পর্যন্ত হিলডা সলিস পড়াশোনার পাট চুকিয়েছে, কাজও করছে। তবে যেখানে-সেখানে নয়, সে আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে!

ভেবে দেখো, আজ যখন কোনো ছোট্ট লাতিন মেয়ে দেখছে তার মতোই আরেকজন মেয়ে দেশের মন্ত্রী হতে পেরেছে, তখন সে কতটা উৎসাহিত বোধ করে! একজন কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী যখন দেখে তার মতো কেউ জাতিসংঘের দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে, তখন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার স্বপ্ন কতটা বদলে যায়! তুমি জানোও না, নিজের অজান্তেই এই পৃথিবীতে তুমি কত কিছু বদলে দিতে পারো। নিজেকে কখনো ক্ষুদ্র ভেবো না, নিজের সম্ভাবনার অমর্যাদা কোরো না। নিজেকে দশজনের জন্য রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করো। তুমি আজ যেখানে এসেছ, সেখানে আসতে অন্যদের উৎসাহিত করো, সহযোগিতা করো। একজন মেয়ে যত দিন না নিজেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামার কিংবা সামরিক কমান্ডার হিসেবে কল্পনা করবে না, তত দিন সে তা হতেও পারবে না। আশপাশের নারীরা যত দিন তাকে না জানাবে যে বাহ্যিক সৌন্দর্য কিংবা ফ্যাশন ছাড়াও চিন্তাভাবনার অনেক কিছু আছে—নতুন কিছু আবিষ্কার করতে হবে, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হবে—তত দিন পর্যন্ত সে হয়তো ভাববে সৌন্দর্যের মধ্যেই তার জগৎ সীমাবদ্ধ। তোমরা নিজেদের গুরুত্ব অনুধাবন করো এবং নিজেদের শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাও।

আমার শেষ উপদেশ হলো, ধৈর্য ধরো। শুনতে খুবই সহজ আর সাদামাটা মনে হচ্ছে, কিন্তু এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো ভালো জিনিসই সহজে পাওয়া যায় না। এমন কোনো সফল মানুষ পাবে না, যে ব্যর্থতাকে এড়িয়ে যেতে পেরেছে। বরং তার উল্টোটাই হতে দেখা যায় সব সময়। তারা মারাত্মক সব ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে। তারা ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। তারা কখনো হাল ছেড়ে দেয় না।
তোমাদের বয়সে আমার পকেটে টাকা বলতে গেলে ছিলই না, সামনে এত সুযোগও ছিল না। এই বিশাল পৃথিবীতে আমি নিজের স্থান খুঁজে ফিরছিলাম। আমি চাইতাম বড় কিছু করতে, চারপাশকে বদলে দিতে। কিন্তু কীভাবে তা করব, এ নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণাও ছিল না আমার। গ্র্যাজুয়েশনের পর আমাকে এই নিউইয়র্কে অনেক ছোটখাটো কাজ করে জীবন চালাতে হয়েছে। তবু আমি ভুলে যাইনি আসলে কী করতে চেয়েছিলাম।

অসীম ধৈর্য আমার জন্মগত কোনো গুণ নয়। আমি ধৈর্য ধরতে শিখেছি। শৈশবে যে নারীরা আমাকে লালনপালন করেছিলেন, তাঁদের দেখে আমি শিখেছি ধৈর্য কী জিনিস। আমার মা কী সংগ্রাম করে একই সঙ্গে পড়াশোনা, চাকরি আর আমাকে সামলেছেন, তা আমি দেখেছি। অসম্ভব অর্থকষ্ট, তার ওপর ভেঙে যাওয়া সংসার। কিন্তু তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। খুব ভোরে মা আমাকে ডেকে তুলতেন ইংরেজি পড়ার জন্য। আমার বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে যেত। অভিযোগ করলে মা বলতেন, ‘এটা আমার জন্যও পিকনিক নয়, গাধা কোথাকার!’ পরে আমি আমার নানির কাছে বেড়ে উঠি। তিনি হাইস্কুলের পর আর পড়তে পারেননি। একটা স্থানীয় ব্যাংকে কাজ করতেন নানি। যেসব পুরুষকে তিনি একসময় প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তাঁর চোখের সামনে তারা পদোন্নতি পেয়ে ওপরে উঠে যেত। কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি। নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়ে কাজ করে গেছেন। একসময় তিনি সেই ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। না, তিনিও হার মানেননি।
পরে আমার সঙ্গে এক নারীর দেখা হয়, যাঁর দায়িত্ব ছিল আমার চাকরির ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া। তিনি আমাকে এমন পরামর্শ দিয়েছিলেন যে শেষ পর্যন্ত আমি তাঁকে বিয়েই করে ফেলি! বিয়ের পর ক্যারিয়ার আর সংসার একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে মিশেল ও আমি দুজনেই দারুণ হিমশিম খেয়েছি। আমাদের ধৈর্য ছিল বলেই সেই কঠিন সময়গুলোতে সংসার টিকিয়ে রাখতে পেরেছি। মিশেলের বাবা-মা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। তাঁদের আদর্শের গুণেই আজ মিশেল এত কিছু সামলে নিতে পেরেছে, আমার জীবনের ওঠানামার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।
এই মানুষেরাই আমার সব অনুপ্রেরণার উৎস। যাদের কথা কখনো খবরে আসে না, যারা দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে আছে, কেউ চেনেও না তাদের। তারা শুধু নিজের দায়িত্ব নিঃশব্দে পালন করে যায়, বিপদের সামনে শক্ত হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, কোনো কিছুতেই তারা হার মানে না। আমি আজ তাদের জন্যই এতদূর আসতে পেরেছি। তারা নিজেরা পৃথিবী বদলানোর জন্য উঠেপড়ে লাগেনি, কিন্তু তারা আছে বলেই পৃথিবীটা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে, যাবে।

মনে রেখো, এই পৃথিবীতে নিজের চিহ্ন রেখে যাওয়া সোজা নয়। এর জন্য ধৈর্য ধরতে হয়, প্রতিজ্ঞা থাকতে হয়। হেসেখেলে সফল হওয়া যায় না। সাফল্যের জন্য প্রতি মুহূর্তে ব্যর্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। তুমি যদি সংগ্রাম করে নিজের জায়গা করে নিতে পিছপা না হও, দশজনের সামনে নিজেকে দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারো আর যত বাধা আসুক না কেন হাল ছেড়ে না দিয়ে লেগে থাকতে জানো, তাহলে আমি নিশ্চিত বলতে পারি, শুধু তুমিই সফল হবে না, তোমাকে দেখে আরও অনেকে সফল হতে শিখবে। তোমাদের সাফল্যে গোটা জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
ঈশ্বর তোমাদের মঙ্গল করুন।
সূত্র: ইন্টারনেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার।