পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১২

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন একুশ শতক শেষে উষ্ণতা বাড়বে ৪ ডিগ্রি



ঢাকা, নভেম্বর ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারলে একুশ শতকের শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

১৮ নভেম্বর প্রকাশিত ‘টার্ন ডাউন দ্য হিট’ শীর্ষক এই বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়া, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়া, চরম তাপদাহ দেখা দেয়াসহ একের পর এক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

এতে বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলের মানুষই কম বেশি ভুগবে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী। মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশসহ আরো কয়েকটি দেশ।

পোটসড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইম্প্যাক্ট রিসার্চ (পিআইকে) এবং ক্লাইমেট অ্যানালিটিকস নামের দুটি প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ব্যাংকের হয়ে এ গবেষণা চালায়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব এ শতাব্দী শেষে আরও ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপ্তপ্ত হওয়ার পথে রয়েছে। গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই তাপমাত্রার বৃদ্ধি রোধ করা তেমন একটা সম্ভব হবে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উষ্ণতাবৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার দেশগুলোর তালিকায় আছে বাংলাদেশও। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এমনিতেই বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেশি। এদেশের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি অঞ্চলের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ মিটারেরও মধ্যে থাকায় বন্যা ও লোনা পানিতে উপকূলীয় জনপদ তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা আরও বাড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও উষ্ণতা বাড়ায় সাইক্লোনগুলো আরও শক্তিশালী হবে। বিশ্ব ব্যাংকের আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৮০ লাখের বেশি মানুষ তিন মিটারের বেশি জলোচ্ছাসের কবলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে যাদের সংখ্যা ২০৫০ সালের বেড়ে ১ কোটি ৪৬ লাখে দাড়াতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১০০ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দশমিক ৫ মিটার থেকে ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার, মেক্সিকো, ভারত, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া।

তাপমাত্র বাড়ায় বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়গুলোর তীব্রতা আরো বাড়বে বলে গবেষকরা জানান।

কয়েকশ’ বছরে একবার করে দেখা দেওয়া চরম তাপদাহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শতাব্দী শেষে অনেক অঞ্চলে প্রায় পুরো গ্রীষ্ম মৌসুম ধরেই দেখা দিতে পারে। বিশ্বের শুষ্ক অঞ্চলগুলোর আরও শুষ্ক হবে। অন্যদিকে বৃষ্টিপাতের অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টি আরও বাড়বে।

এসব পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ায় পুষ্টিহীনতার হার বাড়বে।

প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়াং কিম বলেন, “বিশ্বের তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস অবশ্যই বাড়তে দেয়া যাবে না। আমাদেরকে এই বৃদ্ধিটা দুই ডিগ্রির মধ্যে ধরে রাখতে হবে।”

তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বৃদ্ধি রোধ করা এখনও সম্ভব। এখন থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা যাবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এফএ/এসইউ/১১৪০ ঘ.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন